প্রয়োজনে প্রিয়জন

প্রয়োজনে প্রিয়জন

Size
Price:

Read more



লেখক : মোরশেদা কাইয়ুমী
প্রকাশনী : ব্রাদার্স পাবলিকেশন
বিষয় : ইসলামি সাহিত্য
পৃষ্ঠা : 203, কভার : হার্ড কভার, সংস্করণ : 1st published,20121


শীতের অলস দুপুর গড়িয়ে বিকেল ছুঁইছুঁই, বাজারের এদিকটায় মানুষ জন তেমন একটা নেই। পাশেই একটা মসজিদ, তার পাশের একটা মসজিদ, তার পাশের দোকানের বাইরে একটা পাগলিকে দেখা যাচ্ছে বসে বসে বিড়বিড় করছে। দুই হাতে আগলে রাখা একটা পুটলির মত। পুটলিটাতে একটা ফুটফুটে শিশু হাত পা নাড়ানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু পাগলিটা শক্ত করে চেপে ধরে রাখায় পারছেনা খুব একটা। একটু পরেই শিশুটি চিৎকার করতে লাগলো ক্ষীধায়। পাগলি হলেও দেখতে শুনতে বেশ ভদ্রই লাগছে আজকে তাকে। পরিস্কার একটা জামা পরনে চুলগুলো অন্যদিনের মতো জট পাকানো নয়। তবে চেহারায় একটা ক্লান্তির ছাপ।
আজ এক সপ্তাহ হলো পাগলিটার বাচ্চাটা হয়েছে। চেয়ারম্যান সাহেবের কাছারি ঘরের বারান্দায় ডেলিভারির ব্যাথায় চিৎকার করছিলো সে, চেয়াম্যানের কাজের মহিলাটা এসে বাড়িতে নিয়ে যায় জোর করেই, পাগলি হলেও তো মানুষ সে। চেয়ারমানের বউ ধাত্রী ডেকে ডেলিভারির ব্যবস্থা করলেন বাড়িতেই। রাতে ফুটফুটে একটা মেয়ের জন্ম দেয় পাগলিটি। কেউ জানেনা এত সুন্দর এই মেয়ের কে, আজ দুই তিন মাস হলো বাজারে বাজারে ঘুরে বেড়ায়। কাউকেই জ্বালায় না, নিজের মনে বিড়বিড় করে আর ক্ষিদে পেলে দোকানে গিয়ে হাত পাতে। যার ইচ্ছে হলে সে কিছু দেয়। প্রেগন্যান্ট দেখে যুবকদের লালসার হাত থেতেও সে বেঁচে যায়। তবে তাকে দেখে যে তারা অশ্লীল কথাবার্তা বলে না তা না।চেয়ারম্যান সাহেবের স্ত্রী সুফিয়া বেগম ফুটফুটে মেয়েটাকে কোলে নিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন। না জানি এই বাচ্চা বাবা কে। কী করবেন তিনি ভেবে পাননা।
ধাত্র্রী বলে উঠে, “আপা এই মাইয়ারে আলম সাহেবের বউরে দিয়া দেন। কী সুন্দর মাইয়াটা দেহেন, উনাগো তো কোন ও পোলামাইয়া নাই। মাইয়াডারে আদর কইরা মানুষ করবো।” ”আসলেই ঠিক বলেছো খবর দিও তো। এই পাগলি না জানি কী করবে মেয়েটাকে? নিজের তো ঠিক ঠিকানা নাই।” বলেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন সুফিয়া।
পাগলিটি কিছুটা নিস্তেজ হয়ে থাকলেও সব শুনতে পাচ্ছিলো। কী বুঝলো কে জানে বিড়বিড় করতে লাগলো নিজে নিজে।
সুফিয়া বেগম মা মেয়ে দুজনকেই যত্ন করতে লাগলেন পরম মমতায়। যত দিন পারেন কাছেই রেখে দিবেন ঠিক করেছেন। বাচ্চাটার মায়ের বুকের দুধ খাওয়ারও দরকার আছে আর অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথায় পথে পথে ঘুরবে মেয়েটা? কোন মায়ের বুকের ধন আজ এভাবে পথে পথে ঘুরছে? ইশ ভাবতেই মনটা খারপ হয়ে যায় সুফিয়ার।এক সপ্তাহ চোখে চোখে রাখলেও আজ সকালেই সুফিয়া বেগম চোখের আড়াল হতেই পাগলিটা বাচ্চাটাকে নিয়ে চলে এসেছে তার পুরানো আস্তানায়। সকাল থেকে নিজেও কিছু খেতে পারেনি বাচ্চাকেও খেতে দেয়নি। বুঝেও তো না কিছু, কিভাবে বাচ্চাকে খাওয়াবে? এদিকে বাচ্চাটা চিৎকার করেই যাচ্ছে।
হঠাৎ এদিক ওদিক তাকিয়ে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে সে পুকুরে নেমে গেলো। হি হি করে হাসতে হাসতে বাচ্চাকে পানিতে ফেলে দিলো। কয়েকটি বাচ্চা ছেলে পাশেই খেলা করছিলো, তারা এটা দেখে চিৎকার করে সবাইকে ডাকতে লাগলো।
চিৎকার শুনে কোথা থেকে যেন এক যুবক উড়ে এসে পানিতে পড়লো, বাচ্চাকে কোলে নিয়ে সাথে সাথেই উঠে এলো। দোকানের সব মানুষ এসে জড়ো হয়ে গেছে, সবার চোখ-মুখে উৎকন্ঠা। বাচ্চাটা বাঁচবে তো? বাচ্চাটার চোখে-মুখে পানি ঢুকেনি খুব একটা তাও দ্রুত গাড়ি একটা ডেকে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে পাগলিকে এক হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে উঠে বসলো। পাশে আরো একজন স্থানীয় যুবক এসে বসে গেলো পাগলিটা আবার না নেমে যায় এই আশংকায়।
বাচ্চা কোলে নেয়া অচেনা যুবকটি কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে পাশের যুবকটিকে সালাম দিয়ে বললো, “ভাই এদিকে সবচেয়ে কাছের হাসপাতালে নিয়ে যাই চলুন। আমি তো চিনি না আপনিই পথ দেখাবেন প্লিজ। ড্রাইভার সাহেব প্লিজ দ্র্রুত চালান, বাচ্চাটাকে যে কোনো মূ্ল্যে বাচাঁতে হবে।”
বলেই চোখ মুছলো শুভ্র চেহারার অচেনা যুবকটি।
”ভাইয়া কিছু মনে করবেন না কে এই মহিলা? আর এই বাচ্চাটাই বা আপনার কে হয়? চিনেন মনে হচ্ছে।”
”ভাই দুটি মাস আমি একে পাগলের মত খুঁজতেছি, বিশ্বাস করুন আমি আসরে নামাজের সময় হয়ে যাওয়ায় মসজিদের এদিকে আসছিলাম ভাগ্যিস । আল্লাহ ঠিক সেই মূহর্তেই তাকে মিলিয়ে দিলন।”
স্থানীয় যুবকটি আগ্রহী হয়ে উঠে ওর কথার ধরনে।
”কী হন আপনি সেটা বললেন না? বলুন না প্লিজ কে হয় সে আপনার?”
”আমি? আমি ওর প্রিয়জন ছিলাম তবে সে ভুল পথের পথিক ছিলো আর সে আমার হয়তো প্রয়োজনে প্রিয়োজন।”
”কিন্ত আপনার পরিচয় কী? খুব জানতে ইচ্ছে করছে কী হয়েছিলো।”
"আমি দুনিয়ার ক্ষণিকের মুসাফির, কে আমি, কী আমার পরিচয় সে অনেক কথা।”
মুসাফির যুবকটি বাচ্চাটাকে বুকে জড়িয়ে রাখে, পাগলীটা কেমন যেন একটা শূন্যদৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে। সেই দৃষ্টি অনুসরণ করে মুসাফির যুবকের দৃষ্টিও শূন্যে মিলিয়ে যায়। গাড়ি চলছে তো চলছেই যেন পথের কোনো শেষ নেই।
*****
সুবহে সাদিকের স্নিগ্ধ হালকা একটা আলো ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। মামুনুর রশীদের ঘুম ভেঙ্গে গেছে আজানের সময়ের বেশ আগে। মুয়াজ্জিন সাহেব ছুটিতে বাড়িতে গেছেন বলে ইমাম সাহেব তাকেই মসজিদের চাবি দিয়ে গেছেন আজান দেয়ার জন্য । সেই দায়িত্ববোধ থেকেই ঘুম ভেঙ্গে যায় তার যথা সময়ে। তিনি বিছানা থেকে উঠে বসে পাশে তাকিয়ে দেখেন তার স্ত্রী রাহেলা বেগম আর পাঁচ বছরের বাচ্চা মাহিম অঘোর ঘুমে আচ্ছন্ন।
”রাহেলা. ওঠো নামাজের সময় হয়ে গেছে।”
”হুম” ঘুমের ঘোরে বলে রাহেলা।
”কই উঠলেনা? নামাজে এত অলসতা করলে কীভাবে হবে হুম !”
”আরে বাবা কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান কোরো না তো, যাও তুমি। আমি পরে উঠে নামাজ পড়বো।”
রাহেলার ধমক খেয়ে মামুন সাহেব চুপ হয়ে যান। জানেন একে যতই ডাকেন কোনো লাভ হবেনা। লাভের মধে¨ ¨হবে রাগারাগি করে পাড়া গরম করে ফেলবে। হাদীসে পড়েছিলেন ফজরের আর ইশার নামাজ পড়া মুনাফেকদের জন¨ অনেক ভারী। রাহেলাকে দেখেই তা বেশ বুঝতে পারেন। এই মহিলা তার জীবনে এসে জীবনটাকে তছনছ করে দিয়েছে। অথচ সুমাইয়া ছিলো তার জীবনের চাঁদের মত। সে তার জীবনকে আলোয় আলোয় ভরিয়ে দিয়েছিলো। কোথায় হারিয়ে গেলেপ্রিয়তমা? কেন হারিয়ে গেলে? মামুন এসব ভাবতে ভাবতে মাহমুদকে ডাকতে যায়। এত আগে ওকে ডাকা ঠিক হবে কিনা ভেবে কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্ধে পড়ে যান। এমনিতেই ভোরের আলো ফুটতে শুরু করলে তাদের মসজিদে জামাতের সময় হয় বলে মাহমুদকে তখন ডেকে তুলেন। ও নামাজ পড়ে হুজুরের কাছে মক্তবে পড়ে সাড়ে সাতটার দিকে আসে।
মাহামুদের মায়াময় মুখের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকেন কিছুক্ষণ। চোখের পানি চলে আসে তার। মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে আলতো চুমু দিয়ে ডাকেন,” বাবা ওঠ বাবা মসজিদে যাবো তো, নামাজ পড়তে হবেনা?”
মাহমুদ তুই হাতে চোখে কচলাতে কচলাতে বলে, “বাবা আজান হয়ে গেছে?”
”নারে বাপ, আজকে তোর বাবা আজান দেবে, চল দেখি তাড়াতাড়ি।”
মাহমুদ খুশিতে লাফ দিয়ে উঠে যায়।
”বাবা, আমি আজান দিতে পারবো না? আমাকে আজান দিতে দেবে বাবা?”
”তুইতো এখনো অনেক ছোট, বড় হলে তখন পারবি।”
মাহমুদ মন খারাপ করে ওযু করতে যায়।
মসজিদে যেতে যেতে বাবার হাতটা ধরে বলে,”বাবা আমি কবে বড় হবো? আমি কী তখন আজান দিতে পারবো?”
”হ্যা রে বাবা আজান দিতে পারবি, নামাজ ও পড়াতে পারবি তুই । দেখিস একদিন অনেক বড় একটা মসজিদের ইমাম হবি তুই। আল্লাহ তোকে অনেক বড় করবেন।”
”আমিন । ইনশাআল্লাহ বলোনি যে বাবা, আমাদের ওস্তাদ বলেছে ভবিষ্যতের কোন কথা বললে ইনশাআল্লাহ বলতে হয়।”
”তাই নাকি? ভুল হয়ে গেছে বাবা, ইনশাআল্লাহ আমার মাহমুদ একদিন সুলতান মাহমুদ এর মত অনেক বড় হবে।”
”সুলতান মাহমুদ কে বাবা?”
মামুন সাহেব বুঝতে পারেন এখন সুলতান মাহমুদের কথা বলা ঠিক হয়নি। ছেলে আর তাকে শান্তিতে থাকতে দেবেনা। এত প্রশ্ন করতে পারে, কোথা থেকে আসে এত প্রশ্ন কে জানে? তিনিও কী এমন ছিলেন?
মসজিদের সামনে এসে যাওয়ায় মাহমুদের প্রশ্ন থেকে বেঁচে গেলেন তিনি, দ্রুত তালা খুলে আজান দিতে লাগলেন । মাহমুদ মুগ্ধ হয়ে বাবার আজান শুনতে লাগলো আর মনে মনে নিজেও আজানের উত্তর দিতে লাগলো। ওস্তাদ বলেছে আজান শুনলে মুয়াজ্জিনের সাথে সাথে জবাব দিতে হয়। আরো কী কী যেন বলেছেন ভুলে গেছে মাহমুদ।
মামুন সাহেব আজান শেষ করে দোয়া পড়ে দরুদ পাঠ করতে লাগলেন।
”আচ্ছা বাবা আজানের জবাব দিতে বলেছেন ওস্তাদ, আজানের জবাব কেন দিতে হয়?”
”কেন দিতে হয় সেটা বলেননি বুঝি?” মামুন সাহেব হেসে বলেন।
”ইয়ে মানে ভুলে গেছি আমি, বলোনা বাবা।” মাহমুদ ও একটা বোকাসোকা হাসি দিয়ে বলে।
মামুন সাহেব ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখেন এখনো জামাতের অনেকসময় বাকি আছে। দুই রাকাত নামাজ পড়ে এসে ছেলের সামনে বসেন। ছেলের জানার উৎসাহে ভাটা পড়তে দিতে চাননা তিনি । তাই সময় থাকলেই বিস্তারিত কুরআনের তাফসীর আর বিভিন্ন রকমের হাদীস শুনান তাকে। মাহমুদ ও মুগ্ধ হয়ে সে সব শুনতে থাকে।
”শুনো বাবা আজানের জবাব কেন দিতে হয়,
ইবনুস সারাহ (রা.) আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা) হতে বর্ণনা করেন যে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর বলেন, এক ব্যক্তি বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ মুয়াজ্জিনরা তো আমাদের উপর ফজিলতপ্রাপ্ত হচ্ছে (আমাদের চেয়ে বেশি সওয়াবের অধিকারী হচ্ছে)। আমরা কিভাবে তাদের সমান সওয়াব পাব? তিনি বলেন, মুয়াজ্জিনরা যে রূপ বলে, তুমিও তদ্রুপ সওয়াবপ্রাপ্ত হবে।
”সওয়াব পেলে কী হয় বাবা?”
”অনেক সওয়াব পেলে তুমি জান্নাতে যেতে পারবে।”
মুসল্লীরা আসতে শুরু করেছে এরই মধ্যে, ইমাম সাহেবও আসলেন। ওদের বাপ ছেলের আলোচনার সমাপ্তি টানতে হলো।মামুন সাহেব মাহমুদের দিকে তাকিয়ে দেখেন ওর চোখে মুখে অনেক প্রশ্ন জমা। মনে মনে দোয়া করলেন আল্লাহর কাছে। ইয়া রব আমার মাহমুদকে তুমি অনেক বড় আলেম করে দিও। মাহিমের এদিকে তেমন আগ্রহ নেই, যদিও সে ছোট এখনো্ তবুও এই বয়সেই মারামারি আর রাজ্যের দুষ্টুমিতে সবাইকে অতিষ্ট করে তুলে। মাহমুদ এই কয় মাসে মাহিমের এত মার খেয়েছে একটা বারও উল্টো মারতে দেখেননি মাহমুদকে। এত ছোট বয়সে এতটা ভদ্র এতটা ধৈর্য কী করে নিজের ভেতর আয়ত্ত্ব করতে পারলো ভেবে পাননা তিনি।
নামাজ শেষ করে মাহমুদকে নিয়ে কবর জেয়ারত করতে যান, এটা তার নিত্যদিনের রুটিন। মাহমুদ আজ একটু দেরিতে বাড়ি আসলো। ওস্তাদ আজ ওদের সবাইকে পড়া শেষ করে নবী-রাসুলদের জীবনী শুনাচ্ছিলেন।
অবশ্য এখানেও আমাদের ছোট্ট মাহমুদেরই ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।
তার মাথায় সেই সুলতান মাহমুদের ব্যাপারটি ঘুরতে থাকায় পড়া শেষ করে ওস্তাদকে জিজ্ঞস করেছিলো আচ্ছা ওস্তাদ সুলতান মাহমুদ কে ছিলেন?
ওস্তাদ কিছুটা ঘাবড়ে যান, সুলতান মাহমুদ সম্পর্কে হালকা পাতলা জানলেও পিচ্চিদের সামনে বিস্তারিত না জেনে বলা উচিত হবেনা। অন্যরা তিনি যা বলেন তাই চুপচাপ শুনে গেলেও মাহমুদ নানা ধরনের প্রশ্ন করবে সেটা তিনি বেশ জানেন। তার জন্য তাকে ভালো ভাবে জেনে নিতে হবে। মাহমুদের এই বয়সেই জানার এত আগ্রহ দেখে তিনি মুগ্ধ হন।
”শুনো বাবারা সুলতান মাহমুদ সম্পর্কে আমরা পরে একদিন জানবো, আজকে আমরা আমাদের প্রিয় রাসুল (সা.) এর ছোট বেলার গল্প শুনি চলো।”
সেই গল্প শুনতে শুনতে এতটা দেরি আজকে।
বাড়িতে আসতে আসতে পেটে মোচড় দিয়ে উঠলো প্রচন্ড ক্ষিদেতে। দ্রুত পা চালিয়ে বাড়ি এসে দেখে মাহিম বিড়ালকে রুটি খাওয়াচ্ছে ছিঁড়ে ছিঁড়ে। এটা দেখে যেন ওর ক্ষিদেটা আরো বেড়ে গেলো।
মায়ের সামনে সামনে ঘুরাঘুরি করতে লাগলো ওকে দেখে যদি খেতে ডাকেনএই আশায়্ অদ্ভুত ব্যাপার হলো মা যেন তাকে দেখতেই পাচ্ছেন না। এক বারও খেতে ডাকলেন না, নিজের মনে কাজ করতে লাগলেন। ভীষণ কান্না আসতে লাগলো মাহমুদের। সে কখনো খেতে চায় না নিজ থেকে,খুব বেশি ভয় পায় মাকে। নানু মারা যাওয়ার পর ওকে যখন বাবা নিয়ে আসেন তখন ও ছোট্ট একটা ভাই আর মা পেয়ে অনেক বেশি খুশি হয়েছিলো। ওর বন্ধুরা সবাই কী সুন্দর মা ডাকে, মায়ের হাতে টিফিন খায়, মায়ের হাত ধরে স্কুলে আসে। মাহমুদ দূর থেকে দাড়িঁয়ে প্রচন্ড মন খারাপ করে এসব দেখে যেতো চুপচাপ্।
এখনতো ও মায়ের হাতে খাবে, মায়ের হাত ধরে স্কুলে যাবে। খুশিতে লাফাতে লাফাতে সে এসেছিলো দাদু বাড়িতে। অবশ্য বাবা বলেছে দাদু বাড়ি না বলে আমাদের বাড়ি বলতে।
এসেই মাকে জড়িয়ে ধরতে যায় মাহমুদ, মাহিম এসে ওকে টেনে সরিয়ে দেয়। মায়ের মুখটা কেমন যেন লাগে দেখতে মাহমুদের কাছে।
কই ওর বন্ধুদের মায়েরাতো কী সুন্দর হাসি হাসি মুখে তাদেরকে জড়িয়ে ধরে স্কুল ছুটির পরে। তবে? তার মায়ের মুখ এমন গম্ভীর কেন? ছোট্ট মাহমুদের মাথায় বেশি কিছু ধরে না, শুধু বুঝতে পারে মায়ের মন খারাপ।
”মা, কী হয়েছে তোমার?” ছোট্ট আদুরে কন্ঠে জানতে চায় মাহমুদ।
রাহেলা কিছু না বলে ঘরের ভেতরে চলে যায় মাহিমকে নিয়ে। মামুন সেদিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মাহমুদের হাত ধরে ঘরে নিয়ে যায়।
এতটুকু একটা বাচ্চা তাকে মা ডেকে জড়িয়ে ধরতে চাইলো আর সে কিনা। এতটা পাষাণ কী করে হয় মানুষ?
মাহমুদ কিছুই বুঝতে পারেনা,সে কী কোনো ভুল করলো? মা কেন তার উপর রাগ করলেন? মাহিম কেন মাকে ধরতে দিলোনা? ওর চোখ হতে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো। মামুন মাহমুদকে বসিয়ে রেখে টয়লেটে গিয়েলেন। এসে দেখেন ছেলেটা তার ছলছল চোখে মন খারাপ করে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।
কলিজায় মোচড় দিয়ে উঠলো ভীষণ, তিনি স্বার্থ পরের মত মায়ের কথা শুনে বিয়েটা করে ফেললেন, ছেলেটার কথা ভাবলেন না একটিবারও। মনে মনে , “সুমাইয়া তুমি আমায় ক্ষমা করে দিও, তোমার ছেলের চোখের পানির জন্য আমিই দায়ী।”
”কীরে বাবা এভাবে বসে আছিস কেন?”
মাহমুদের মাথায় তখন তারেক ভাইয়ার বলা একটা কথা ঘুরছিলো। ও মায়ের কাছে আসার কথা শুনে যখন লাফাচ্ছিলো তখন তারেক ভাইয়া বলেছিলো “যা যা সৎ মায়ের কাছে যাচ্ছে আবার লাফাচ্ছে। বের হয়ে যাবে লাফালাফি।”
ও অবাক হয়ে ভাবছিলো সে সব।
”আচ্ছা বাবা সৎ মানে কী?”
মামুন চমকে উঠে ছেলের কথায়।
”কেন বাবা? সৎ মানে হলো ভালো। ওই যে বলে না সৎ কাজ করলে আল্লাহ পুরস্কার দেয়।”
”হ্যাঁ হ্যাঁ ওস্তাদ বলেছিলো মক্তবে, বাবা সৎ মা মানে কী ভালো মা? কিন্তু সব মাই তো ভালো মা। আমার মাকে কেন তারেক ভাইয়া সৎ মা বললেন?”
ছেলেকে বুকে চেপে ধরে চোখের পানি আড়াল করে বলেন, “হ্যাঁ বাবা সৎ মা মানে তো ভালো মাই।”
”মা আমার উপর রাগ কেন করে বাবা?”
”রাগ নাতো, মায়ের শরীর ভালো লাগছেনা তো তাই, পরে দেখবে তোমাকে অনেক আদর করবে। আচ্ছা বাবা যাও এখন হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো। খেতে হবেনা?”
মাহমুদকে পুকুরে নিয়ে হাত মুখ ধুয়ে দেন। তিনি বুঝতে পারেন মাহমুদকে সহজে মেনে নেবেনা ওরা মা ছেলে। কী করার ছিলো তার? এতদিন ওর নানীর কা:ছেই তো ছিলো। নানী মারা যাওয়ার পর মামীরা রাখতে চাইলো না। তাছাড়া এটাতো মাহমুদেরও নিজের বাড়ি। কেন সে অন্যের বাড়িতে অন্যের দয়ায় দিন কাটাবে তিনি বেঁচে থাকতে?
”কেরে? মামুন আইলি? সাথে এটা কে? আমার নাতি নাবি?”Read more

0 Reviews

Contact form

Name

Email *

Message *